বিডিনিউজ ১০, ইসলাম ডেস্ক: কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে সম্বোধন করছেন সে অনুভূতি অর্জিত হবে কুরআন তিলাওয়াতের সময় চুপ থাকা, গভীর চিন্তাভাবনা (তাদাব্বুর) করা ও উত্তম আমলের মাধ্যমে। যেহেতু একজন মুসলিম এ ঈমান রাখে যে, কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দাদেরই সম্বোধন করেন, তিনি তাদের নির্দেশ দেন, নিষেধ করেন। কখনো বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে নির্দিষ্ট করে সম্বোধন করেন, আর কখনো সাধারণভাবে সম্বোধন করেন।
যখন আল্লাহ মুমিনদের নির্দিষ্ট করে সম্বোধন করেন তখন একজন মুসলিম এ সম্বোধনটিকে স্মরণে আনবে এবং বলবে, ‘আমরা শুনলাম আর মেনে নিলাম।’ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, যখন আপনি শুনবেন আল্লাহ তায়ালা বলছেন: ‘ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছ’ তখন আপনি কান খাড়া রাখুন। কারণ আল্লাহ হয়তো কোনো ভালো কাজের নির্দেশ দেবেন কিংবা কোনো মন্দ কাজ থেকে বারণ করবেন।’ [তাফসির ইবনু কাসির, ১/৩৭৪]
যখন আল্লাহ সকল মানুষকে লক্ষ্য করে সম্বোধন করেন তখনো স্মরণ করবে যে, আল্লাহ তোমাকে সম্বোধন করছেন। যদি সেটা কোনো আদেশ হয় তাহলে সেটা পালন করবে, যদি কোনো নিষেধ হয় তাহলে সেটা থেকে বিরত থাকবে, যদি কোনো উপদেশ হয় তাহলে উপদেশ মোতাবেক আমল করবে।
গোটা কুরআনের ক্ষেত্রেই বান্দা এ অনুভূতি লালন করবে যে, আল্লাহ তাকে সম্বোধন করছেন। তবে কুরআনের যে অংশ তিলাওয়াত করা হচ্ছে সে অংশ মোতাবেক এ অনুভূতি ভিন্ন ভিন্ন হবে।
যখন কোনো আনুগত্যের কথা উল্লেখ করা হবে তখন স্মরণে আনবে যে, আল্লাহ তাকে এ আনুগত্য করার নির্দেশসূচক সম্বোধন করছেন। যখন কোনো পাপের উল্লেখ আসবে তখন স্মরণ করবে যে, আল্লাহ তাকে এ পাপ থেকে বেঁচে থাকার নিষেধাজ্ঞাসূচক সম্বোধন করছেন। যখন ঈমানদারদের উল্লেখ আসবে তখন স্মরণ করবে যে, আল্লাহ তাদের সাথে মিত্রতা রাখা ও ভালোবাসা পোষণ করার সম্বোধন করছেন। যখন কুফর ও নিফাকওয়ালাদের উল্লেখ আসবে তখন স্মরণ করবে যে, আল্লাহ তাদের সাথে শত্রুতা রাখা ও ঘৃণা করার ব্যাপারে সম্বোধন করছেন।
যখন শয়তানের উল্লেখ আসবে তখন স্মরণে আনবে যে, শয়তানের শত্রুতা ও বিরুদ্ধাচারণ করা, তার অনুসরণ না করা এবং আল্লাহর আনুগত্য মোতাবেক আমল করার ব্যাপারে সম্বোধন করা হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে বনি আদম! আমি কি তোমাদের বলে দেইনি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করবে না, সে তোমাদের স্পষ্ট শত্রু? আর (বলে দেইনি যে,) আমারই ইবাদত করবে? এটাই তো সরল পথ।’ [সুরা ইয়াসিন : ৬০-৬১]
যখন সত্য ও সত্যবাদীদের উল্লেখ আসবে তখন স্মরণে আনবে যে, আল্লাহ তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য সম্বোধন করছেন। যখন মিথ্যা ও মিথ্যাবাদীদের উল্লেখ আসবে তখন স্মরণে আনবে যে, আল্লাহ তাদের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার জন্য সম্বোধন করছেন।
ইমাম আবু বকর আল-আজুর্রি (রহ.) বলেন, “এরপর আল্লাহ তায়ালা তার মাখলুককে কুরআন অনুধাবন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন: ‘তবে কি তারা কুরআন অনুধাবন করে না; নাকি তাদের অন্তরে তালা লাগানো আছে?’ [সুরা মুহাম্মাদ : ২৪]
তিনি আরও বলেন: ‘তবে কি তারা কুরআন অনুধাবন করবে না? এই কুরআন যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে আসত তাহলে তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত।’ [সুরা নিসা : ৮২]
(ইমাম আজুর্রি আরও বলেন) আপনাদের প্রতি আল্লাহ রহম করুন! আপনারা কি দেখছেন না যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাঁর বাণী অনুধাবন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করছেন। যে ব্যক্তি তাঁর বাণী অনুধাবন করে সে রবকে চিনতে পারে, তাঁর মহাক্ষমতা ও শক্তি জানতে পারে, ঈমানদারদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ অবগত হতে পারে, জানতে পারে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর যা কিছু ফরয করেছেন; তখন ওয়াজিব পালন করাকে সে নিজের ওপর অবধারিত করে নেয় এবং তার মহান মনিব যা কিছু থেকে থেকে সতর্ক করেছেন সেটা থেকে সতর্ক হয় এবং যা কিছুর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন সেগুলোর প্রতি আগ্রহী হয়।
নিজে কুরআন তিলাওয়াত করার সময় কিংবা অন্যের তিলাওয়াত শ্রবণ করার সময় যে ব্যক্তির অবস্থা এমন হবে তার জন্য কুরআন নিরাময়ক। সে ব্যক্তির সম্পদ না থাকলেও সে ধনী। আত্মীয়-স্বজন না থাকলেও সে শক্তিমান। যখন অন্যেরা নির্জনতা অনুভব করে তখন সে তা অনুভব করে না। সে যখন কোন সুরা পড়া শুরু করে তখন তার লক্ষ্য থাকে কখন আমি যা তিলাওয়াত করছি সেটা থেকে নসিহত গ্রহণ করতে পারব? তার উদ্দেশ্য এটা থাকে না যে, কখন আমি সুরাটি শেষ করতে পারব? তার উদ্দেশ্য থাকে কখন আমি আল্লাহর ভাষ্য উপলব্ধি করতে পারব? কখন আমি (নিষেধ) থেকে বিরত হব? কখন আমি শিক্ষা গ্রহণ করব? কেননা তার কুরআন তিলাওয়াত হচ্ছে- ইবাদত। গাফলতি নিয়ে কোনো ইবাদাত হয় না। আল্লাহই তাওফিকদাতা।” [আখলাকু হামালাতিল কুরআন, পৃষ্ঠা-৩]
অতএব, আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াতকারীর অবস্থা এমনই হোক।
লেখক : শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ, আরবের প্রখ্যাত দাঈ।